
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চায়ের মধ্যে যে অমৃত স্বাদ থাকে, তার বর্ণনা নতুন করে দেবার কিছু নেই। চায়ের উপকারিতা শুধু সকালের ভাঙা ঘুমের জড়তা কাটানোতেই সীমাবদ্ধ নয়। এতে আছে বহুমুখী গুণ যা আপনাকে সুন্দর ও সুস্থ রাখতে সহায়ক। আমাদের যাপিত জীবনে চা ব্যবহার হয় নানাভাবে।
চায়ের উপকারিতা শুধু সকালের ভাঙা ঘুমের জড়তা কাটানোতেই সীমাবদ্ধ নয়। চায়ে আছে বহুমুখী গুণ যা আপনাকে সুন্দর ও সুস্থ রাখতে সহায়ক। চা খেলে গায়ের রং পরিবর্তন বা কালো হয় এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আবার কেউ কেউ মনে করেন চা খেলে ত্বক খসখসে হয়ে যাবে। অনেকে আবার বিশ্বাস করেন, চা খেলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চামড়ায় কালো ছাপ পড়ে—এর কোনোটিই ঠিক নয়। তবে মাত্রাতিরিক্ত খেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। চায়ের রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড। যার মধ্যে রয়েছে চমত্কার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস কালো এবং সবুজ চা দুটোতেই পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। ফ্ল্যাভোনয়েড নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস খাবারের সাথে বেশি পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড শরীরে গেলে হূদযন্ত্র অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, ফলমূল বা শাক-সবজিতে যে পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস থাকে তার চেয়ে চায়ে বেশি পাওয়া যায়। চায়ে আছে কিছু ভিটামিন, দুটি খনিজ পদার্থ ও ১৫টিরও বেশি অ্যামাইনো অ্যাসিড। আছে থায়ামিন (ভিটামিন বি) কার্বোহাইড্রেট, মেটাবলিজমের জন্য যা দরকার। চায়ে আছে ভিটামিন-সি (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড) যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া চায়ে আছে ভিটামিন-বি, ফলিক অ্যাসিড প্রভৃতি।
আমাদের শরীরে দিনে ২ থেকে ৫ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজের দরকার হয়। পাঁচ থেকে ছয় কাপ চা দুধ ছাড়া পান করলে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের ৪৫ শতাংশ পূরণ হয়। শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য প্রয়োজন পটাশিয়ামের। পটাশিয়াম আলস্য কাটায়, ক্লান্তি, অবসাদ প্রভৃতিকে কাটিয়ে শরীরকে চাঙ্গা করে রাখে। প্রতিদিন ৪-৫ কাপ সবুজ চায়ের লিকার শরীরের প্রয়োজনীয় পটাশিয়ামের তিন-চতুর্থাংশ পূরণ করে। চায়ে সামান্য পরিমাণে জিঙ্ক আছে।
যা শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। আবার লেবু দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে চা (লেবু চা)। এ চা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি খেতেও সুস্বাদু। লেবু সাইট্রাস পরিবারভুক্ত। লেবুতে আছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি আর পটাশিয়াম। আছে আরও কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান। তবে ভিটাসিন সি আর পটাশিয়াম মিলে শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। উপরন্তু লেবুর পটাশিয়াম হূিপণ্ডের কর্মক্ষমতাও বাড়ায়। লেবুর রসের ভিটামিন সি দূর করে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা। মানসিক বিষণ্নতায় শারীরবৃত্তীয় কারণেই ভিটামিন সির ঘাটতি দেখা দেয় দেহে। লেবু চা পানে সেটি পূরণ হয় নিমেষেই। ফলে চাঙ্গা হয়ে ওঠে মন। লেবু চা দাঁতের ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে লেবু চা খুব কার্যকর। মুখের গন্ধ রোধেও লেবু চা কার্যকর। আর দাঁতে প্লাক জমার কারণে যে অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ পড়ে, তা সরাতেও লেবু চা সাহায্য করে। ত্বকের ক্ষত পূরণে লেবু চা কার্যকর। লেবু চা পান করলে ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ত্বক আরও উজ্জ্বল হয়। ত্বকের পোড়াভাব যেমন দূর করতে পারে লেবু, তেমনি চোখের চারপাশের কালো দাগও মিলিয়ে দিতে পারে।